রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া আশ্বাসে ফাঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শিক্ষার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি ওঠেছে জোরালোভাবে। ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে রাজপথে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে চালাকালে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ভ্যাট আদায়ে পৃথক পৃথক ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাখ্যার পর পরই দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয় যে ভ্যাট পরিশোধ করবে তা আসবে কোথা থেকে? কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার না করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ (মালিক) নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই এ সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আদায় করে নেবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে শিক্ষার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছিলেন তখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, টিউশন ফি’র ওপর এই ভ্যাট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই সরকারকে এই ভ্যাট পরিশোধ করবে।
একই দিন বিকেলে সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে না। অর্থমন্ত্রী আরও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যায়ের খোঁজ নিয়েছে। তাতে তিনি দেখেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে একজন শিক্ষার্থীর দৈনিক এক হাজার টাকা খরচ হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে অর্থ নিচ্ছে তার সাড় সাত শতাংশ দাবি করেছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীদের বাড়তি কোনো টাকা দিতে হবে না। ভ্যাট আরোপের কারণে শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানোও উচিত হবে না।
কিন্তু সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে তা আসবে কোথা থেকে? শিক্ষার্থী ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। অন্যদিকে আজ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এনবিআর যে আশ্বাস দিয়েছে তাতে ফাঁকি রয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। গতকাল দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন দলীয় কার্যালয়ে বলেন, “এনবিআর এর বক্তব্যে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরাতেই তারা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছে। তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠান যখন ভ্যাট দেবে, তখন তারা অন্য জায়গা থেকে অর্থ আনবে না। প্রতিষ্ঠান এই সাড়ে ৭ ভাগ ভ্যাট আদায় করার জন্য প্রকারান্তরে শিক্ষার্থীদের বেতনটা বাড়িয়ে দেবে; সেমিস্টার, ল্যাবরেটরি ফিসহ অন্যান্য ফিও বাড়িয়ে দেবে।’’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট থাকতে পারে না, কারণ, এটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়,”।
এদিকে সরকারের আশ্বাসকে ‘অতি চতুরতা’ আখ্যায়িত করে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে তিন দিনের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ এর ব্যানারে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার থেকে সোমবার) ছাত্র ধর্মঘটের এই ঘোষণা দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।